আপনাদের মধ্যে অনেকে আছে যারা গরুর খামার করে দুধের ব্যবসা করতে চান। তাদের ক্ষেত্রে লাভজনক ব্যবসা করতে হলে অবশ্যই গরুর দুধ বৃদ্ধির ওষুধ গুলো সম্পর্কে জানতে হবে।
পাশাপাশি গাভীর দুধ বৃদ্ধির হোমিও ওষুধ সম্পর্কে জানলে সহজেই বেশি পরিমাণ দুধ উৎপাদন করে লাভজনক ব্যবসা করা যাবে। দুধ বৃদ্ধির ওষুধ গুলো সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত দেখতে থাকুন।
গাভীর দুধ বৃদ্ধির ভিটামিন রয়েছে যেগুলো ব্যবহার করে গাভীর দুধের উৎপাদন পরিমাণ বাড়ানো যায়। তবে অবশ্যই নিয়ম অনুযায়ী ব্যবহার করতে হবে, একজন কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করবেন। আরো বিস্তারিত থাকছে আর্টিকেলটিতে, তাই সকলেই ধৈর্য সহকারে আর্টিকেলটি পড়ুন।
গরুর দুধ বৃদ্ধির ঔষধ – গাভীর দুধ বৃদ্ধির ভিটামিন
বর্তমানে বাজারে গাভীর দুধ বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কোম্পানির ঔষধ রয়েছে। তাছাড়া ওষুধের পাশাপাশি গাভীর দুধ বৃদ্ধির ইনজেকশন রয়েছে যেগুলো ব্যবহার করে গাভীর দুধ বৃদ্ধি করা যায়। আর কথা না বাড়িয়ে জেনে নেওয়া যাক গরুর দুধ বৃদ্ধির ওষুধ কি কি।গরুর দুধ বৃদ্ধির ঔষধ ও ইনজেকশনঃ
- এ মিল্ক ভেট (A Milk Vet)
- Decaf me 200ML ইনজেকশন
- কেল্ডি মেটভেট 200ML রেনেটা কোম্পানি
- কফা ক্যালসিয়াম ২৫০ মিলি
- প্রো মিল্ক ভেট স্কয়ার কোম্পানি
- সি-ক্যাল-পি
- Minerva DS
আপনারা উপরোক্ত লিস্টে দেওয়া ওষুধ বা ইনজেকশন গুলো ব্যবহার করে গরুর দুধ বৃদ্ধি করতে পারবেন।এ মিল্ক ভেট এই ওষুধটি আপনারা গরুর খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন। আর গরুর দুধ বৃদ্ধির জন্য আপনারা ইনজেকশন ঔষধ ব্যবহার করতে পারেন।
Decaf me 200ML এটি হল গরুর দুধ বৃদ্ধির ইনজেকশন ওষুধ। এটি সাধারণত ডেক্সটস স্যালানের সাথে মিশিয়ে ইনজেকশনের মাধ্যমে গরুর মাংসপেশিতে দিতে হয়।
কেল্ডি মেটভেট 200ML এটি সাধারণত ইনজেকশন একই নিয়মে দিতে হয়। তাছাড়া গরুকে ক্যালসিয়াম জাতীয় ওষুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে গরুর স্বাস্থ্যের সাথে সাথে গরুর দুধ বৃদ্ধি করতে পারেন।কফা ক্যালসিয়াম ২৫০ মিলি এটি হল গরুর ক্যালসিয়াম জাতীয় ঔষধ বা উপাদান। এটি আপনারা গরুকে বিভিন্ন খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন।
এতে শুধুমাত্র ক্যালসিয়াম সহ বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর উপাদান উপস্থিত রয়েছে।প্রো মিল্ক ভেট এটিও গরুর দুধ বৃদ্ধির জন্য ক্যালসিয়াম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়াও সি-ক্যাল-পি ও Minerva DS দুটি ভিন্ন কোম্পানির ক্যালসিয়াম জাতীয় ভিটামিন রয়েছে যেগুলো গরুকে খাওয়ালে গরুর স্বাস্থ্য ভালো হওয়ার সাথে সাথে গরুর দুধও বৃদ্ধি পাবে।
এছাড়াও গরুর মাংস বৃদ্ধিতেও এটি সাহায্য করে থাকে। এই উপরের দেওয়ার লিস্টে ওষুধ ছাড়াও আপনারা বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির বিভিন্ন রকম গাভীর দুধ বৃদ্ধির জন্য ওষুধ পেয়ে যাবেন। আপনাদের যেটা ভালো লাগে সেটা কিনবেন। আর গরুকে পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার মাধ্যমেও দুধ দেওয়ার পরিমাণ বাড়ানো যায়।
গাভীর দুধ বৃদ্ধির হোমিও ঔষধ – গাভীর দুধ বৃদ্ধির পাউডার
আপনারা চাইলে গাভীর দুধ বৃদ্ধির হোমিও ওষুধ ব্যবহার করে গাভীর দুধ দেওয়ার পরিমাণ বাড়াতে পারেন। গাভীকে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দেওয়ার বিকল্প হিসেবে হোমিও ওষুধ খাওয়াতে পারেন। এতে করে গাভির স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এবং ওজন বৃদ্ধি পাবে।
আরো পড়ুনঃ ফ্লোরা এর কাজ কি বিস্তারিত
তাছাড়াও গাভী অধিক পরিমাণ দুধ উৎপাদনে সক্ষম হবে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে বর্তমানে অনেক ধরনের গাভীর দুধ বৃদ্ধির জন্য এন্টিবায়োটিক ওষুধ বের হয়েছে,যেগুলোতে মূলত বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর উপাদান থাকে।
আরো পড়ুনঃ মিল্ক শেক খেলে কি ওজন বাড়ে দেখুন
এর ফলে ওই দুধ মানুষ খাওয়ার ফলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা বা রোগ দেখা দিতে পারে। এজন্য আপনারা গরুর পুষ্টিকর দুধ উৎপাদন করতে গরুর দুধ বৃদ্ধির হোমিও ওষুধ খাওয়াতে পারেন।
এতে কোন ক্ষতিকর পদার্থ নেই। আপনার বাজারে বিভিন্ন ধরনের গাভীর দুধ বৃদ্ধির হোমিও ওষুধ পেয়ে যাবেন। বিশেষ করে হোমিও ওষুধের দোকানে পেয়ে যেতে পারেন।
দুধের গরুর খাবার তালিকা
দুধের গরুকে সঠিক সুষুম খাবার দেওয়ার মাধ্যমে গরুর দুধ দেওয়ার পরিমাণ বাড়ানো যায়। এর জন্য আপনাকে দুধের গরুর খাবার তালিকা সম্পর্কে জানতে হবে।
এতে করে আপনার অতি সহজেই দুধের গরুর জন্য খাবার তৈরি করতে পারবেন। যার ফলে গরু সুষম খাদ্য পাবে এবং গরু ওজনের বৃদ্ধির সাথে সাথে দুধ দেওয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দেবে। চলুন আর কথা না বাড়িয়ে এবার জেনে নেই দুধের গরুর খাবার তালিকা গুলোঃ
- গরু যখন প্রথম পাঁচ কেজি দুধ দিবে তখন গরুকে দিতে হবে ১৪ কেজি কাঁচা ঘাস , দানাদার খাদ্য মিশ্রণ ২ কেজি , আয়োডিন লবণ ১০০ গ্রাম ও খড় হাফ কেজি। তাছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ পানির ব্যবস্থা থাকতে হবে।
- গরুর দুধ দেওয়ার পরিমাণ তিন কেজি করে হলে গমের ভুসি এক কেজি , চালের গুড়া এক কেজি , ভিটামিন ও মিনারেল ১০০ গ্রাম , খৈল ২০০ গ্রাম ও খেসারি ভাঙ্গা ৫০০ গ্রাম ইত্যাদি খাদ্য গুরুকে দিতে হবে। অবশ্যই সঠিক পরিমাণ পানির ব্যবস্থা থাকতে হবে।
গাভীর দুধ উৎপাদন বাড়ানোর উপায়
গাভীর দুধ উৎপাদন বাড়ানোর কিছু নিয়ম ও উপায় রয়েছে যা আপনাদের মাঝে এখন শেয়ার করা হবে। নিম্নে গাভীর দুধ উৎপাদন বাড়ানোর উপায় গুলো তুলে ধরা হলোঃ
- অবশ্যই গাভীর ড্রাই পিরিয়ড এর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ড্রাই পিরিয়ড বলতে সাধারণত গাভী বাছুর দেওয়ার পর বাছুর বড় হওয়া পর্যন্ত সময়কে বলা হয়। বাছুর বড় হওয়ার পর গাভীর পুনরায় গর্ভবতী হওয়ার আগ পর্যন্ত সময়কে ড্রাই পিরিয়ড বলা হয়। সাধারণত ড্রাই পিরিয়ড এ সময়কাল ৬০ দিন হলে ভালো হয়। এতে করে গাভী দুধ বেশি উৎপাদনে সক্ষম হয়।
- গাভীর দুধ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য গর্ভবতী সময়ে গাভীকে পুষ্টিকর সমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে। সুষম খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে করে গাভি অধিক দুধ দেয় এবং তার বাচ্চার গঠন সুষ্ঠু হয়। এজন্য গাভীর সুষম খাদ্য তালিকা তৈরি করবেন এবং তা সংগ্রহ করবেন।
- গাভীর দেহের পরিপাক সংঘটিত হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ পানির ব্যবস্থা রাখতে হবে। তাই খাবারের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণ পানির ব্যবস্থা রাখলে গাভী সুস্থ থাকে এবং অধিক দুধ দিতে সক্ষম হয়।
- গাভীর বাচ্চা প্রসবকালে গাভীকে যত্নে রাখতে হবে। এ সময় গাভীর জন্য সঠিক খাদ্য ব্যবস্থা করতে হবে এবং গাভীকে নরম খর এর বিছানার ব্যবস্থা করতে হবে। গাভীর প্রতি বাড়তি যত্ন নিতে হবে এবং সব সময় খেয়াল রাখতে হবে।
- গাভী যেখানে থাকবে অর্থাৎ গাভীর বাসস্থান সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। গাভীর বাসস্থান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখলে দুধ অধিক পরিমাণ দেওয়ার ক্ষমতা বেড়ে যায়।
- তারাও গাভী দুধ দিলে প্রতিদিন একই সময়ে দুধ দোহন করতে হবে। এতে করে গাভীর দুধ দেওয়ার ক্ষমতা বজায় থাকে এবং দুধ দেওয়ার পরিমাণ আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে।
দুগ্ধবতী গাভীর খাদ্য তালিকা
- গরুর সুষম খাদ্য উপকরণ হিসাবে সবুজ ঘাস , খড় , দানাদার খাদ্য ও পানি দিতে হবে।
- আপনার গাভীর ওজন যদি ১০০ কেজির উপরে হয়ে থাকে তাহলে গাভীকে ২ কেজি খড় , ৫ কেজি সবুজ ঘাস ,১.৫ কেজি দানাদার খাদ্য দিতে হবে। তবে খাদ্যের পরিমাণ হালকা কিছুটা কম বেশি হতে পারে আপনার গরুর খাদ্য চাহিদা অনুযায়ী।
- গরুর খাদ্য তৈরিতে ৫০ শতাংশ গমের ভুসি , ২০ শতাংশ চালের গুড়া , ১৫ শতাংশ খেসারি ভাঙ্গা , ১০ শতাংশ খৈল ও খনিজ , আয়োডিন লবণ ১ শতাংশ করে থাকতে হবে।
দুগ্ধবতী গাভীর খাদ্য তালিকাঃ
- মিশ্রন দানাদার খাদ্য ৪-৭ কেজি
- কাঁচা সবুজ ঘাস ৯-১৩ কেজি
- শুকনো খড় ৩-৪ কেজি
- আর পানি দিবেন গাভীর চাহিদা অনুযায়ী।
গরুর দুধ বৃদ্ধির ঔষধ সম্পর্কে সাধারণ জিজ্ঞাসা – FAQs
৬. গরুর দুধ বৃদ্ধির হোমিওপ্যাথিক ওষুধ কতদিন ব্যবহার করতে হয়?
উত্তরঃ এটি নির্ভর করে গরুর বর্তমান শারীরিক অবস্থা ও দুধ উৎপাদনের মাত্রার ওপর। সাধারণত, কয়েক সপ্তাহ ধরে নিয়মিত ব্যবহারের পর ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে, পশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধের মেয়াদ নির্ধারণ করা উচিত।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় বন্ধুরা আর্টিকেলটিতে গরুর দুধ বৃদ্ধির ঔষধ গুলোর নাম এবং গাভীর দুধ বৃদ্ধির হোমিও ঔষধ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেছি। আপনারা যারা গাভী পালন করেন তারা অবশ্যই আর্টিকেলটি পড়বেন। অনেকগুলো উপায় ও ওষুধ সাজেস্ট করেছি যেগুলো গাভীর দুধ বৃদ্ধিতে সহায়ক।
সঠিক নিয়মের গাভীকে ওষুধ খাওয়ালে দুধ উৎপাদনের পরিমাণ বাড়ানো যায়। পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার দিলে প্রাকৃতিক ভাবেই দুধ উৎপাদন বেড়ে যায়। যে কোন ধরনের ওষুধ গরুকে খাওয়ানোর পূর্বে অবশ্যই পশু চিকিৎসকের নিকট পরামর্শ করে নিবেন।