অনলাইনে আয় করার দীর্ঘমেয়াদী উপায়গুলির মধ্যে একটি হল প্যাসিভ ইনকাম। প্যাসিভ
ইনকাম এমন একটি উপায় যেখানে আপনি প্রতিদিন কাজ না করেও উপার্জন করতে পারবেন।
প্যাসিভ ইনকামের বহু আইডিয়া রয়েছে যেগুলো অনুসরণ করে আপনি অনলাইন থেকে প্যাসিভ
ইনকাম করা শুরু করতে পারেন। আজকের সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন
এবং ঘরে বসে প্যাসিভ ইনকাম করুন ৭টি উপায়ে।
বর্তমান সময়ে আর শুধু অফিসে গিয়ে আয় করার দিন নেই। প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে এখন
ঘরে বসেই তৈরি করা যায় প্যাসিভ ইনকাম, এমন একটি আয় যেখানে আপনি নিয়মিত সময় না
দিয়েও আয় করতে পারেন।আজকে আমরা জানবো ঘরে বসে প্যাসিভ ইনকাম করার ৭টি বাস্তব ও
কার্যকর উপায় যা আপনি ২০২৫ সালেও শুরু করতে পারেন।
প্যাসিভ ইনকাম কী?
প্যাসিভ ইনকাম (Passive Income) এমন একটি উপার্জনের পদ্ধতি যেখানে আপনি একবার কাজ
করে দীর্ঘদিন ধরে ইনকাম পেতে পারেন। অর্থাৎ, আপনাকে প্রতিদিন পরিশ্রম করতে
হচ্ছে না, তবুও আপনি ইনকাম পাচ্ছেন। আর এই ভাবে ইনকাম করাকেই প্যাসিভ ইনকাম
বলা হয়। যেখানে রেগুলার বা প্রতিদিন কাজ করার প্রয়োজন নেই।
ঘরে বসে প্যাসিভ ইনকামের ৭টি বাস্তব উপায়
বর্তমান সময়ে ঘরে বসে অনলাইনে প্যাসিভ ইনকাম করা খুবই সহজ। বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম
ও মাধ্যম রয়েছে যার সাহায্যে আপনি ঘরে বসে দীর্ঘমেয়াদি প্যাসিভ ইনকাম করতে
পারবেন। প্যাসিভ ইনকাম এর ক্ষেত্রে খুব একটা বেশি পরিশ্রম করতে হয়
না।
আরো পড়ুনঃ লুডু খেলে টাকা ইনকাম করার সফটওয়্যার
প্রথম থেকে বেশি পরিশ্রম করে পরে ধীরে ধীরে কাজ করলেও ইনকাম হতে থাকে। এভাবে
প্যাসিভ ইনকাম করে কম পরিশ্রমে ইনকাম করা যায়। নিম্নে ঘরে বসে প্যাসিভ ইনকামের
৭টি উপায় তুলে ধরা হলোঃ
1. ব্লগিং (Blogging)
আপনার অনলাইনে লেখালেখি করার ইচ্ছা রয়েছে অথবা লেখালেখি করতে ভালোবাসেন, সে
ক্ষেত্রে নিজের একটি ব্লগিং ওয়েবসাইট খুলে সেখানে লেখালেখি করে প্যাসিভ ইনকাম
শুরু করতে পারেন। মূল কথা হলো আপনি যদি লিখতে পারেন বা কোনো বিষয়ে ভালো
জানেন,
আরো পড়ুনঃ মাসে লাখ টাকা আয় করার উপায়
তাহলে একটি ব্লগ তৈরি করে গুগল অ্যাডসেন্স ও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং থেকে আয়
করতে পারবেন। ব্লগিং ওয়েবসাইটে সাধারণত প্রথম দিকে প্রচুর পরিশ্রম করে
ভিজিটর আনতে হয়। পরে ধীরে ধীরে কম কাজ করেও প্রচুর ইনকাম করা যায়।
ব্লগিং ওয়েবসাইটের শুরুতেই প্রথমে আপনি রেগুলার আর্টিকেল লিখে পাবলিশ করতে
থাকলেন। এখন যখন আপনার ইনকাম শুরু হবে, তখন আপনি চাইলে একদিন পরপর আর্টিকেল লিখে
পাবলিশ করতে পারেন। সে ক্ষেত্রেও আপনার ইনকাম হতে থাকবে।
আবার আপনি যদি ব্যস্ত মানুষ হয়ে থাকেন, সে ক্ষেত্রে সপ্তাহে মাত্র ১টি আর্টিকেল
লিখেও গুগল এডসেন্স এর মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেখে ইনকাম করতে পারেন।
এভাবে অনেকেই এখন ব্লগিং ওয়েবসাইট খুলে প্যাসিভ ইনকাম শুরু করেছে।
ব্লগিং ওয়েবসাইট খুলে সেখান থেকে ইনকাম করতে হলে খুবই ধৈর্য ধরে কাজ করতে হয়।
ব্লগিং মূলত ধীরস্থির প্রক্রিয়া, অর্থাৎ এখান থেকে ইনকাম হতে অনেকটা বেশি সময়
লাগে। তবে আপনি যদি রেগুলার টাইম মেইনটেইন করে কাজ করেন তাহলে অবশ্যই ভালো
পরিমাণ ইনকাম করতে পারবেন।
আপনি যে কোন মাধ্যমে ব্লগিং ওয়েবসাইট খুলতে পারেন। Blogger মাধ্যমে ফ্রিতে কম খরচের ডোমেন ক্রয় করে সাইট তৈরি করতে পারবেন।পাশাপাশি
প্রফেশনাল ভাবে ব্লগিং করতে চাইলে WordPress
দিয়ে সাইট তৈরি করতে পারেন।
তবে এক্ষেত্রে ওয়ার্ডপ্রেস সাইট তৈরি করতে অনেক খরচ হয়। যাদের বাজেট কম বা খরচ
করার সামর্থ্য নেই তারা চাইলে ব্লগার ডট কমে অ্যাকাউন্ট খুলে কম খরচে ওয়েবসাইট
তৈরি করতে পারেন।
সুবিধাঃ
- শুরু করা সহজ এবং কম খরচে।
- আপনার পছন্দের বিষয়ে কাজ করার সুযোগ।
- দীর্ঘমেয়াদী আয়ের সম্ভাবনা।
অসুবিধাঃ
- প্রথমদিকে প্রচুর সময় এবং প্রচেষ্টার প্রয়োজন।
- ট্র্যাফিক পেতে ধৈর্য প্রয়োজন।
2. ইউটিউব চ্যানেল
ইউটিউব একটি শক্তিশালী প্যাসিভ ইনকামের মাধ্যম। একবার ভিডিও আপলোড করলে সেটি বছর
বছর দেখা যায়, আর সেখান থেকেই ইনকাম আসতে থাকে। মূলত আপনি একবার ভিডিও আপলোড
করলেই সেটি সকলেই সারা বছর দেখতে পারবে।
আর মানুষ আপনার ভিডিও ইউটিউবে দেখলেই আপনি ইনকাম করতে পারবেন। এর জন্য আপনি
প্রথমে অনেকগুলো আকর্ষণীয় কনটেন্ট ভিডিও তৈরি করে আপলোড করবেন। যখন আপনার
ইনকাম শুরু হবে, তখন আপনি রেগুলার ভিডিও না বানিয়েও মাঝে মাঝে ভিডিও বানিয়ে
আপলোড করে ইনকাম করতে পারবেন।
নির্দিষ্ট টাইম অনুযায়ী ভিডিও আপলোড করতে পারেন। এই যেমন ধরুন এক সপ্তাহ পর পর
ভিডিও আপলোড করলেন। এছাড়াও যাদের বড় ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে তারা প্রায় ১ মাস
পর পর ভিডিও আপলোড করে থাকে। তাদের খুব একটা বেশি কাজ না করেও প্রতিদিন ইনকাম
হচ্ছে।
প্যাসিভ ইনকামের অন্যতম একটি জনপ্রিয় উৎস হল এই ইউটিউব। যেখানে খুব বেশি
পরিশ্রম করার প্রয়োজন হয় না। আর ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিওতে মনিটাইজেশনের
মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে আয় করতে পারবেন। এছাড়াও ponsorship,
Affiliate Link এর মাধ্যমে ইনকাম করার সুযোগ রয়েছে।
3. ইবুক বা ডিজিটাল প্রোডাক্ট বিক্রি
যদি কোনো বিষয়ে আপনার ভালো জ্ঞান থাকে, তাহলে সেই বিষয়ে একটি ইবুক বা কোর্স
বানিয়ে বিক্রি করতে পারেন। আর কোর্স বানালে দীর্ঘদিন বিক্রি করে আয় করা
যায়।
তাহলে বুঝতে পারছেন আপনাকে প্রতিদিন কাজ করতে হচ্ছে না, আপনি শুধুমাত্র একটি
কোর্স বানিয়েই সেগুলো বিক্রি করে রেগুলার আয় করতে পারছেন। এটি প্যাসিভ
ইনকামের জনপ্রিয় একটি উৎস।
আপনার গভীর জ্ঞান থাকলে একটি ebook লিখে ফেলুন এবং কনটেন্ট বানানোর দক্ষতা থাকলে
আকর্ষণীয় ভিডিও কনটেন্ট অথবা কোর্স তৈরি করে আয় করুন।
- ই-বুক অথবা কোর্স একবার তৈরি করে রাখলেই অনেকবার বিক্রি সম্ভব
- Udemy, Gumroad, Teachable ইত্যাদি কোর্স বিক্রি করার জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম।
সুবিধাঃ
- একবার তৈরি করে বারবার আয় করার সুযোগ।
- উচ্চ মুনাফার সম্ভাবনা।
- বিশ্বব্যাপী ক্রেতাদের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ।
অসুবিধাঃ
- শুরুতে সময় এবং দক্ষতার প্রয়োজন হয়।
- প্রচুর মার্কেটিং করার প্রয়োজন রয়েছে, যা অনেকের পক্ষে সম্ভব হয় না।
4. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
আপনি অন্যের পণ্য বা সার্ভিস প্রোমোট করে যদি বিক্রি করাতে পারেন, তাহলে কমিশন
পাবেন। এই উপায়ে প্রতিদিন কাজ করার দরকার হয় না। শুধুমাত্র প্রথম দিকে প্রচুর
মার্কেটিং করে সার্ভিস প্রমোট করতে হয়। পরে ধীরে ধীরে কাজ করলেও ইনকাম
হতে থাকে।
আপনার মার্কেটিং করা লিংক থেকে কোন কাস্টমার প্রোডাক্ট ক্রয় করলে আপনি কমিশন
পেতে থাকবেন। এভাবে সারা জীবন ইনকাম করা সম্ভব। যদি আপনি মাঝে মাঝে
এফিলিয়েট মার্কেটিং করেন।
বিশেষ করে আপনার যদি মার্কেটিং করার বিভিন্ন সোর্স থাকে তাহলে এই উপায়ে
প্যাসিভ ইনকাম করা সম্ভব। যেমন ধরুন আপনার ১ লক্ষ ফলোয়ারের ফেসবুক পেজ রয়েছে।
আপনি এখন চাইলে সেই ফেসবুক পেজটিতে বিভিন্ন কোম্পানির পণ্য ও প্রোডাক্ট প্রমোট
করতে পারেন।
যেহেতু আপনার নিজস্ব ফেসবুক পেজ সেক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে আপনি মার্কেটিং
চালিয়ে যেতে পারবেন। একবার মার্কেটিং করলেই সেখান থেকে আপনার রেগুলার
ইনকাম হতে থাকবে।
5. রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট
আপনি যদি বাড়ি বা ফ্ল্যাটের মালিক হন, তাহলে সেটি ভাড়া দিয়ে স্থায়ীভাবে প্যাসিভ
ইনকাম করতে পারেন। এছাড়াও আপনার বিনিয়োগ করার সক্ষমতা থাকলে, বড় বড় বিল্ডিং
তৈরি করে সেগুলো বিক্রি করতে পারেন।
আবার জমি ক্রয় করে সেই জমি ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে ইনকাম করতে
পারেন। এভাবে ঘরে বসে আপনি কোন কাজ করা ছাড়াই প্রতি মাসে ইনকাম করতে
পারবেন। এক্ষেত্রে প্রথম দিকে প্রাথমিকভাবে বড় অঙ্কের বিনিয়োগের প্রয়োজন
রয়েছে।
সুবিধাঃ
- স্থিতিশীল এবং নির্ভরযোগ্য আয়ের উৎস।
- স্থায়ীভাবে ইনকাম করার সুযোগ রয়েছে।
- ঘরে বসে ইনকাম করার সুযোগ
- পরিশ্রম করে কাজ করার প্রয়োজন নেই।
অসুবিধাঃ
- প্রচুর প্রাথমিক বিনিয়োগ প্রয়োজন।
- বাজারের ঝুঁকি।
6. স্টক ফটোগ্রাফি
যদি আপনার ফটোগ্রাফি বা ভিডিওগ্রাফির দক্ষতা থাকে, তবে আপনি আপনার ছবি বা ভিডিও
স্টক সাইট যেমন Shutterstock, Adobe Stock, Getty Images ইত্যাদিতে আপলোড করে
বিক্রি করতে পারেন। যতবার আপনার ছবি বা ভিডিও ডাউনলোড হবে, ততবার আপনি
রয়্যালটি বা নির্দিষ্ট কমিশন পাবেন।
সুবিধাঃ
- আপনার শখকে আয়ের উৎস হিসেবে ব্যবহার করা।
- কোনো নির্দিষ্ট গ্রাহকের জন্য কাজ করার প্রয়োজন নেই।
- আপনার কাজ সারা বিশ্বের মানুষ দেখতে পাবে।
অসুবিধাঃ
- শুরুতে ভালো মানের ছবি বা ভিডিও তৈরি করতে হবে।
- এই সেক্টরে প্রতিযোগিতা বেশি।
7. App Development
যদি আপনার কোডিং বা অ্যাপ ডেভেলপমেন্টের জ্ঞান থাকে, তবে আপনি একটি মোবাইল
অ্যাপ তৈরি করতে পারেন। অ্যাপটি একবার তৈরি হয়ে গেলে, এটি থেকে বিজ্ঞাপনের
মাধ্যমে, ইন-অ্যাপ পারচেজ বা সাবস্ক্রিপশনের মাধ্যমে প্যাসিভ ইনকাম আসতে
পারে।
যদি প্রচুর মার্কেটিং করে অ্যাপটির প্রচার করতে পারেন তাহলে দীর্ঘদিন ধরে বিনা
কাজ করেও ইনকাম করতে পারবেন। এভাবেই ঘরে বসে প্যাসিভ ইনকাম করুন ৭টি
উপায়ে।
সুবিধাঃ
- উচ্চ আয়ের সম্ভাবনা।
- নিজের সৃজনশীলতা প্রয়োগের সুযোগ।
- বিশ্বব্যাপী ব্যবহারকারীদের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ।
অসুবিধাঃ
- অ্যাপ ডেভেলপমেন্টে উচ্চ দক্ষতা এবং সময় প্রয়োজন।
- মার্কেটিং এবং প্রচারের প্রয়োজন।
- প্রতিযোগিতা বেশি।
শেষ কথা
ঘরে বসে প্যাসিভ ইনকাম করার এই ৭টি উপায় যেকোনো বয়সের মানুষই শুরু করতে পারেন।
শুরুতে হয়তো একটু সময় ও প্রচেষ্টা লাগবে, কিন্তু একবার সেটআপ হয়ে গেলে বছরের পর
বছর আয় করা সম্ভব। তবে একটা কথা মনে রাখুন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্যাসিভ ইনকাম
করতে হলে নির্দিষ্ট কিছু স্কিল ও দক্ষতার প্রয়োজন রয়েছে।
যদি আপনার নির্দিষ্ট কোন স্কিল থাকে তাহলেই আপনি প্যাসিভ ইনকামের উৎস তৈরি করতে
পারবেন।অবশেষে বলবো ধৈর্য ধরে কাজ করতে থাকুন, আর অবশ্যই বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ
করবেন। তাহলে অবশ্যই সফলতা অর্জন করবেন।