মুরগি পালন করে লাভজনক ব্যবসা করতে চান, এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই সবচেয়ে বেশি ডিম দেয় কোন মুরগি সম্পর্কে জানতে হবে। আমরা আর্টিকেলটিতে সবচেয়ে বেশি ডিম দেয় কোন জাতের মুরগি তা সম্পর্কে আলোচনা করব।
যদি আপনি মুরগি পালন করে টাকা ইনকাম করতে চান সে ক্ষেত্রে অবশ্যই উন্নত জাতের মুরগি পালন করতে হবে। আর মুরগি পালন করে মুরগির ডিম বিক্রি করে প্রচুর টাকা উপার্জন করা যায়।
সবচেয়ে বেশি ডিম দেয় কোন মুরগি সম্পর্কে জানার জন্য আজকে নিবন্ধনটি ধৈর্য সহকারে পড়তে থাকুন। প্রতিটি পয়েন্টে আমরা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করব।
সবচেয়ে বেশি ডিম দেয় কোন মুরগি
আপনাকে সর্বপ্রথম মুরগি পালন পদ্ধতি জানতে হবে তার উপর নির্ভর করে কোন মুরগি আপনার জন্য ভালো হবে এবং সেটি বেশি ডিম দেবে কিনা সে সম্পর্কে জানতে হবে। চলুন আমরা নিম্নে সবচেয়ে বেশি ডিম দেয় এমন মুরগির নাম জেনে আসি।
- হাইব্রিড লেয়ার মুরগি
- ফাউমি মুরগি
- আর.আই.আর মুরগি
- আইএসএ ব্রাউন
- সোনালি মুরগি
- হোয়াইট লেগহর্ন
- গ্রামপ্রিয়া
হাইব্রিড লেয়ার মুরগি
আপনি যদি বাণিজ্যিকভাবে মুরগির ডিমের ব্যবসা করতে চান তাহলে সবচেয়ে বেশি ডিম দেয় হাইব্রিড লেয়ার মুরগি। এটি লালন পালন করতে পারেন অর্থাৎ এর খামার দিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
এই মুরগী সাধারণত বছরের প্রায়ই ৩৫০ টি ও বেশি ডিম দিয়ে থাকে। যদি শতাংশ কথা চিন্তা করেন তাহলে বলতে হয় এই মুরগি প্রায় 95% ডিম দেয়।
তবে এই মুরগিকে আপনাকে লালন পালন করার জন্য বিশেষ পরিচর্যা ও সঠিক খামার ব্যবস্থা করতে হবে।লেয়ার মুরগির সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। এর মধ্যে একটি হলো সাদা লেয়ার মুরগি , আর আরেকটি হলো লাল লেয়ার মুরগি।
আরো পড়ুনঃ গরুর দুধ বৃদ্ধির ওষুধের নাম
আরো পড়ুনঃ ফাওমি মুরগির খাবার তালিকা
এই দুটোই সবচেয়ে বেশি ভালো ডিম দিয়ে থাকে। তবে এই দুটোর মধ্যে সাদা লেয়ার মুরগিটি বেশি ডিম দিয়ে থাকে। তবে জাত অনুযায়ী লেয়ার মুরগির বিভিন্ন রকমের রয়েছে। এর মধ্যে থেকে এ দেশের সাধারণত BB ৩০০ জাতের লেয়ার মুরগি সবচেয়ে ভালো বেশি ডিম দিয়ে থাকে।
এসব মুরগীর বাচ্চা সাধারণত আমাদের দেশে উৎপাদন করা হয়ে থাকে তাই আপনারা বিভিন্ন খামার বা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে এসব মুরগির বাচ্চা সংগ্রহ করতে পারবেন।
ফাউমি মুরগি
দেশি মুরগির মধ্যে ফাওমি মুরগি বেশি ডিম দিয়ে থাকে। এই ফাউমি মুরগি সাধারণত বছরের প্রায়ই ৩২০ থেকে ৩৩০ টি উপরে ডিম পেড়ে থাকে। এই মুরগির ডিমের আকার সাধারণত একটু ছোট হয়ে থাকে। তবে এই মুরগির ডিম দেওয়ার হার অনেকটা ভালো।
এই মুরগী গুলো আপনারা সহজেই লালন পালন করতে পারবেন কারণ দেশি মুরগি হিসাবে এটি আবদ্ধ পদ্ধতিতে খুবই মানানসই। এই মুরগিগুলোর বাচ্চা আপনারা বিভিন্ন সরকারি কৃষি প্রতিষ্ঠানে পেয়ে যাবেন।
যেখানে তারা সরকারিভাবে কৃষি উন্নয়নের জন্য এসব মুরগির বাচ্চা সরবরাহ করে থাকে। আপনারা তাদের কাছ থেকে কিনতে পারবেন অথবা সংগ্রহ করতে পারবেন। তাছাড়া বিভিন্ন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও খামার রয়েছে যারা এসব মুরগীর বাচ্চা উৎপাদন করে থাকে তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন।
আর.আই.আর মুরগি
আপনারা যারা নতুন মুরগির ডিমের ব্যবসা করতে চান তাদের ক্ষেত্রে বেশি ডিম পাড়া মুরগি হিসাবে আর.আই.আর মুরগি লালন পালন করতে পারেন। এই মুরগিটিও বেশি ডিম দিয়ে থাকে।
এটি বছরের প্রায় ২৭০ টি থেকে ৩০০ টি ডিম দিয়ে থাকে। আর এই মুরগির অন্যতম সুবিধা হল এই মুরগিটি পরিচর্যা করা সহজ এবং খামারে অতি সহজেই লালন পালন করা যায়।
তাছাড়া ওই মুরগিগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হয়ে থাকে। এজন্যই তেমন অধিক পরিচর্যা করার প্রয়োজন পড়ে না। এই মুরগির বাচ্চাগুলো আপনারা বিভিন্ন হাঁস মুরগির খামারে পেয়ে যাবেন।
তাছাড়া সরকারি হাঁস মুরগির অধিদপ্তরে পেতে পারেন। এছাড়াও অনেক ব্যবসায়ীরা এই মুরগির বাচ্চা উৎপাদন করে থাকে তাদের কাছ থেকেও সংগ্রহ করতে পারবেন।
আইএসএ ব্রাউন
এই মুরগিগুলো সাধারণত বিভিন্ন ধরনের কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্রস ব্রিডিং করার মাধ্যমে এসব মুরগি জাত উদ্ভাবন করে থাকে। যার ফলে এই মুরগিগুলো উন্নত জাতের হাইব্রিড মুরগির মত উন্নয়ন হয়। এই মুরগির জাত সাধারণত বেশি ডিম দিয়ে থাকে।
এই মুরগিগুলো বছরে প্রায় ২৫০ থেকে ৩২০ টি পর্যন্ত ডিম দিতে পারে। এই মুরগির আরেকটি উন্নয়ন জাত রয়েছে তার নাম হলো শুভ্র। এটিও প্রায় ২৮০ থেকে শুরু করে ৩৩০ টি পর্যন্ত ডিম দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে।
এই মুরগিটি দেখতে লালচে বাদামী রঙের। মুরগির ওজন সাধারণত ২ কেজির উপরে এবং ডিমের রং সাধারণত বাদামি কালার হয়ে থাকে। এসব মুরগির বাচ্চাগুলো আপনারা বিভিন্ন কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে সংগ্রহ করতে পারেন তাছাড়া ও সরকারিভাবে বিভিন্ন সরকারি খামার থেকে সংগ্রহ করতে পারেন।
সোনালি মুরগি
আমরা যারা মুরগির মাংস খাই তারা কম বেশি সকলেই এই মুরগি চিনে থাকি। এই সোনালি মুরগি আমরা সকলেই জানি এ সম্পর্কে। এই মুরগিটিও বেশি ডিম দিয়ে থাকে।
এই মুরগির মাংসের স্বাদ প্রায় দেশি মুরগির মত এবং সুস্বাদু যার ফলে আমরা এই মুরগি নাম জানি। বর্তমানে এই মুরগিটি সাধারণত মাংস উৎপাদন করা হিসেবে খামারীরা লালন পালন করে থাকে।
তবে যারা ডিমের ব্যবসা করে থাকেন তারা এখন বর্তমানে সোনালী মুরগি খামার করে ডিমের ব্যবসা করছে। কারণ এই মুরগির ভিডিও ২০০ থেকে ২৫০টির উপরে ডিম দিয়ে থাকে। অর্থাৎ এই মুরগির ডিম দেওয়ার হার প্রায় ৭৫%। এই মুরগির বাচ্চা অতি সহজেই বিভিন্ন খামার থেকে পেয়ে যাবেন।
হোয়াইট লেগহর্ন
বাণিজ্যিকভাবে মুরগির ডিমের ব্যবসা করতে চাইলে আপনি হোয়াইট লেগহর্ন জাতের মুরগিটি লালন পালন করতে পারেন। এটি ডিম দেয়ার জন্য অধিক জনপ্রিয় এবং অন্যতম।
এই মুরগিটি বছরের প্রায় অনেক ডিম পাড়তে পারে। এই মুরগির ওজন সাধারণত দুই থেকে তিন কেজি হয়ে থাকে। মুরগি পালকের রং সাধারণত সাদা তবে মাঝে মাঝে অন্য রঙের দেখা যায়।
আর ডিমের রঙ সাদা হয়ে থাকে। আর এই মুরগিটি বছরে প্রায় ৩০০ থেকে ৩৩০ পিস ডিম দিয়ে থাকে। মাঝে মাঝে কম বেশি ডিম দিয়ে থাকে তবে ডিম দেওয়ার ক্ষমতা বেশি হয় অধিক ডিম দিয়ে থাকে। এই মুরগিগুলো আপনারা বিভিন্ন খামারে অথবা সরকারি কৃষি গবেষণায় পেয়ে যাবেন।
গ্রামপ্রিয়া
বেশি ডিম দেয়া মুরগি চেনার উপায়
বেশি ডিম দেয়া মুরগি চেনার উপায় গুলো নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
- যে মুরগিগুলো সাধারণত বেশি ডিম দেয় তাদের ক্ষেত্রে অবশ্যই মুরগির মাথা ছোট এবং হালকা হতে হবে। মুরগি গুলোর মাথার অংশ নরম ও সুগঠিত হবে।
- তারাও বেশি ডিম দেওয়া মুরগিগুলোর চোখ মুখ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকবে। এবং চোখগুলো সচ্ছল দেখাবে। এছাড়াও নাক মুখ শ্লেষামুক্ত থাকবে।
- এসব মুরগী গুলোর দেহ সাধারণ সুগঠিত এবং বেশি ওজনের হবে। তাছাড়া সঠিকভাবে খাবার গ্রহণ করবে এবং পেটে যদি ডিম থাকে তাহলে মুরগির ওজন ভারী মনে হবে।
- এছাড়াও বেশি ডিম পাড়া মুরগিগুলো অবশ্যই স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাস্থ্যের শরীর হতে হবে অর্থাৎ এই মূলগুলো সাধারণত চটপটে হয়ে থাকে সারাক্ষণ খাবারে খুঁজে থাকে। আর অসুস্থ মুরগি ঝিমিয়ে থাকে এগুলো মুরগি ক্রয় করা থেকে বিরত থাকুন।
কোন মুরগি কত দিনে ডিম দেয়
ডিম উৎপাদনকারী মুরগির বৈশিষ্ট্য
- একটি ভালো মানের মুরগির বৈশিষ্ট্য হতে সেটি পরিমাণ মতো সুষ্ঠু খাবার খাবে এবং নিয়মিত ডিম দিয়ে থাকবে এবং তার ডিমের উৎপাদন খরচ কম হবে।
- এসব মুরগিগুলো সাধারণ দেশি মুরগি তুলনায় অথবা সাধারণ মুরগি তুলনায় খুব দ্রুত ডিম দিবে অর্থাৎ কম বয়সে ডিম দিবে।
- আর এ ধরনের মুরগিগুলোর টানা ডিম পাড়তে থাকলে ধারাবাহিকভাবে ডিমের ওজন একই থাকবে কোন পরিবর্তন ঘটবে না।
- ডিমের খোসা গুলো সাধারণত একটু ভালো মানের হবে যাতে করে ডিম নাড়াচাড়া করা যায় অর্থাৎ বাজারে গিয়ে বিক্রি করা যায়।
- যেকোনো বিরূপ আবহাওয়ায় মুরগিগুলো সঠিকভাবে ডিম দিতে পারবে অর্থাৎ আবহাওয়া মুরগির উপর কোন প্রভাব ফেলবে না ডিম পাড়াতে।
- এছাড়াও ভালো মানের মুরগিগুলো অবশ্যই সাধারণ মুরগি অপেক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে ডিম পাড়তে থাকবে।
সবচেয়ে বেশি ডিম দেয় কোন মুরগি সম্পর্কে প্রশ্ন ও উত্তর – FAQs
সবচেয়ে বেশি ডিম উৎপাদনকারী মুরগির নাম কি?
সবচেয়ে বেশি ডিম উৎপাদনকারী মুরগির নাম হলো হাইব্রিড লেয়ার মুরগি। তাছাড়াও স্বর্ণা মুরগি নামে এক প্রকার জাতের মুরগি রয়েছে যেটিও সবচেয়ে বেশি ডিম দিয়ে থাকে।
- হাইব্রিড লেয়ার মুরগি
- আইএসএ ব্রাউন
- সোনালি মুরগি
- আর.আই.আর মুরগি
- হোয়াইট লেগহর্ন
- ফাউমি মুরগি
কোন মুরগি প্রতিদিন সবচেয়ে বেশি ডিম পাড়ে?
এক সূত্রে জানা গেছে সাদা লেগহর্ন মুরগি প্রতিদিন সবচেয়ে বেশি ডিম পাড়ে। তবে এটি নির্ভর করে মুরগির খাবার তালিকা উপরে। সঠিক পুষ্টি পেলে মুরগি বেশি করে ডিম দেওয়া শুরু করবে।
শেষ কথা
আমরা আর্টিকেলটিতে সবচেয়ে বেশি ডিম দেয় কোন মুরগি সম্পর্কে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। এক কথায় আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি। যদি আপনি মুরগি পালন করে ডিমের ব্যবসা করতে চান তাহলে অবশ্যই উন্নত জাতের ডিম উৎপাদনকারী মুরগি ক্রয় করবেন।
আর কোন মুরগি কত দিনে ডিম দেয় এবং সবচেয়ে বেশি ডিম দেয় কোন মুরগি সম্পর্কে আমরা কিছুটা ধারণা দিয়েছি। আরো বিস্তারিত জানতে চাইলে কৃষি অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন।

আমি নোমান, একজন অনলাইন ইনকাম এক্সপার্ট ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর। ২০২১ সাল থেকে অনলাইন আয়ের বিভিন্ন মাধ্যম নিয়ে গবেষণা করছি এবং সেই অভিজ্ঞতার আলোকে এই ওয়েবসাইটে নিয়মিত তথ্যবহুল অনলাইন ইনকামের বিষয় নিয়ে আর্টিকেল প্রকাশ করি। পাশাপাশি তথ্যবহুল দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি