বর্তমান যুগে অনলাইনের মাধ্যমেই বিভিন্ন প্লাটফর্মে পোস্ট করে টাকা আয় করা
যাচ্ছে। আপনি বিভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে পোস্ট করতে পারেন। সরাসরি লেখালেখি
করেও পোস্ট করা যায়, পাশাপাশি আপনি ভিডিও কনটেন্ট পোস্ট করেও ফেসবুক সহ অন্যান্য
প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রচুর ইনকাম করতে পারবেন। পোস্ট করে কিভাবে টাকা আয় করা যায়
তা নিয়ে বিস্তারিত থাকছে আজকের আর্টিকেলটিতে।
বর্তমান সময়ে ফেসবুকে পেজ খুলে পোস্ট করার মাধ্যমে বিভিন্নভাবে ইনকাম করা
যাচ্ছে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ এখন ছবি পোস্ট করার মাধ্যমেও ইনকাম প্রদান করছে,
যার ফলে আপনি শুধুমাত্র ফেসবুকে কিছু কথা লিখে এবং ছবি পোস্ট করে টাকা ইনকাম করতে
পারবেন।
পাশাপাশি ফেসবুকে ভিডিও পোস্ট করলে অনেক বেশি ইনকাম হয়। ফেসবুক ছাড়াও অনেক
মাধ্যম আছে যেখানে আপনি পোস্ট করে আয় করতে পারবেন। পোস্ট করে টাকা আয় সম্পর্কে
বিস্তারিত জানতে শেষ পর্যন্ত আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্ট করে টাকা আয় করার উপায়
বর্তমান ডিজিটাল যুগে ইন্টারনেট শুধু বিনোদনের মাধ্যমই নয়, বরং আয়ের একটি
শক্তিশালী প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। অনেকেই এখন ঘরে বসেই মোবাইল বা ল্যাপটপ
ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের পোস্ট করে অর্থ উপার্জন করছেন।
আরো পড়ুনঃ মাসে লাখ টাকা আয় করার উপায়
সেটা হতে পারে ফেসবুক পোস্ট, ইউটিউব ভিডিও, ব্লগ আর্টিকেল কিংবা অ্যাফিলিয়েট
লিংক শেয়ার পোস্ট ইত্যাদি। একটু স্মার্টভাবে কাজ করলে প্রতিদিনই আয় সম্ভব।
আরো পড়ুনঃ কল সেন্টারে পার্ট টাইম জব করে ইনকাম
এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি জানবেন কীভাবে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করে টাকা
ইনকাম করা যায়, কোন কোন পদ্ধতি সবচেয়ে কার্যকর, এবং কোন ভুলগুলো এড়িয়ে চলা
উচিত।
যারা একদম নতুন, তারাও ধাপে ধাপে শিখে নিতে পারবেন, কোন বিশেষ স্কিল ছাড়াও
কীভাবে শুরু করবেন। পোস্ট করে টাকা আয় করা যায় এমন সেরা ৮ টি উপায়
নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ
১. ফেসবুক পোস্ট করে টাকা ইনকাম
ফেসবুক আজ শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নয়, বরং একটি আয়ের উৎস। আপনি যদি বড় একটি
ফলোয়ার বেস তৈরি করতে পারেন, তাহলে আপনি স্পনসরড পোস্ট, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
কিংবা পেইড প্রোমোশন থেকে আয় করতে পারবেন।
এছাড়াও ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ভিডিও মনিটাইজেশন নিয়েও ইনকাম করা
সম্ভব। আপনি চাইলে প্রতিদিন ভিডিও পোস্ট করেও ফেসবুক থেকে ইনকাম করতে
পারবেন। ফেসবুক ভিডিও পোস্ট করার জন্য প্রচুর ইনকাম দিয়ে থাকে,
যার কারণে বাংলাদেশে বেশিরভাগ যুবকেরাই ফেসবুকে পেজ খুলে নিত্য নতুন ভিডিও পোস্ট
করে থাকে। ভিডিও পোস্ট করে সেই ভিডিওতে বিজ্ঞাপন দেখানোর মাধ্যমে ইনকাম করতে
হয়। আর এই বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্য অবশ্যই ফেসবুক পেজটিতে মনিটাইজেশন একটিভ
থাকতে হবে।
যদি আপনি ফেসবুকে সকল নিয়ম মেনে ভিডিও পোস্ট করেন তাহলে খুব দ্রুতই ভিডিও
মনিটাইজেশন পেয়ে যাবেন। এরপর আপনি প্রতিদিন ভিডিও পোস্ট করে এবং লেখালেখি
পোস্ট করে ইনকাম করতে পারবেন।
তাছাড়াও রিসেন্টলি ফেসবুকে ছবি পোস্ট করে ইনকাম করা যাচ্ছে। তবে এতে কম ইনকাম
হলেও বেশি বেশি ছবি পোস্ট করলে অনেক বেশি আয় করা সম্ভব।
ইনকামের উপায়ঃ
- ফেসবুক পেজে ভিডিও আপলোড করে ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেলস ও ইনস্ট্যান্ট অ্যাড থেকে আয়।
- ফেসবুক গ্রুপে ডিজিটাল প্রোডাক্টের মার্কেটিং পোস্ট দিয়ে কমিশন আয়।
২. ইউটিউবে ভিডিও পোস্ট করে আয়
আপনি যদি ভিডিও বানাতে পছন্দ করেন, তাহলে ইউটিউব হতে পারে একটি দারুণ
প্ল্যাটফর্ম। ভিডিও আপলোড করে আপনি গুগল অ্যাডসেন্স, স্পনসরশিপ, প্রোডাক্ট
রিভিউ, এবং অ্যাফিলিয়েট লিংক থেকে অর্থ উপার্জন করতে পারেন।
এর জন্য আপনাকে একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলতে হবে। সঠিক নিয়ম অনুযায়ী ইউটিউব
চ্যানেল খুলুন এবং প্রতিনিয়ত আকর্ষণীয় ভিডিও কনটেন্ট পোস্ট করতে
থাকুন। মনিটাইজেশন পেলে সহজেই আপনি বিজ্ঞাপন দেখিয়ে গুগল এডসেন্সের
মাধ্যমে আয় করতে পারবেন।
আয় করার জন্য দরকারঃ
- একটি ইউটিউব চ্যানেল
- ভিডিও বানানোর দক্ষতা
- ১,০০০ সাবস্ক্রাইবার এবং ৪,০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম (মনিটাইজেশনের জন্য)
৩. ব্লগ পোস্ট করে ইনকাম
আপনার যদি লেখালেখির প্রতি আগ্রহ থাকে, তাহলে নিজের একটি ব্লগ খুলে
সেখানে পোস্ট করেও ইনকাম করতে পারেন। বর্তমানে এই উপায়ে সকলের
কমবেশি লেখালেখি করে পোস্ট করে প্রচুর ইনকাম করছে।
এই মাধ্যমে ইনকাম করা সহজ, শুধু মাত্র ওয়েবসাইট খুলে সেখানে লেখালেখি
করতে হয়। যাদের লেখালেখি করার অভ্যাস রয়েছে, তারা কিন্তু এই
উপায়টি অবলম্বন করে নিজের একটি ব্লগিং সাইটে কন্টেন্ট লেখালেখি করে
পোস্ট করতে পারেন।
যদি গুগল এডসেন্স অনুমোদন পান তাহলে সহজেই প্রচুর ডলার ইনকাম করতে
পারবেন। আপনি গুগল এডসেন্স ছাড়াও অন্যান্য আরো অনেক উপায়ে ব্লগিং
সাইট থেকে আয় করতে পারবেন। মূলত গুগল অ্যাডসেন্স, স্পনসরড কনটেন্ট,
অ্যাফিলিয়েট লিংকসহ বিভিন্নভাবে ব্লগ থেকে ইনকাম সম্ভব।
তাই আপনি যদি ব্লগিং ওয়েবসাইটে পোস্ট করে ইনকাম করতে চান, তাহলে প্রথমেই
একটি ব্লগিং ওয়েবসাইট তৈরি করুন। সামান্য কিছু টাকা খরচ করেই
ব্লগিং সাইট তৈরি করা যায়। আকর্ষণীয় ভাবে ব্লগিং সাইট তৈরি করে নিয়মিত
কনটেন্ট পোস্ট করতে থাকুন। আপনার ব্লগিং সাইটে প্রচুর ভিজিটর আসলে
আপনি বিভিন্ন মাধ্যমে ইনকাম করতে পারবেন।
ব্লগের মাধ্যমে ইনকামের উৎসঃ
- Google AdSense
- Affiliate Marketing (Amazon, Daraz, ClickBank)
- Guest Post / Sponsorship
৪. টিকটক বা শর্ট ভিডিও পোস্ট করে আয়
বর্তমানে শর্ট ভিডিও কনটেন্ট খুব জনপ্রিয়। আপনি টিকটক, ইউটিউব শর্টস বা
ইনস্টাগ্রাম রিলসে কনটেন্ট পোস্ট করে স্পনসরশিপ, প্রোডাক্ট প্রমোশন ও
ব্র্যান্ড ডিল থেকে আয় করতে পারেন।
টিকটকে শর্ট ভিডিও আপলোড করে আয় করার জন্য প্রথমে tiktok অ্যাপ ইন্সটল
করুন এবং একটি একাউন্ট খুলে নিন। আর নিয়মিত শর্ট ভিডিও কনটেন্ট
পোস্ট করতে থাকুন।
tiktok এ যেহেতু খুব দ্রুত ভিডিও ভাইরাল হয় সেক্ষেত্রে আপনি খুবই দ্রুত
প্রচুর ভিজিটর পাবেন। তাছাড়াও ইউটিউব শটস ও ইনস্টাগ্রামে শর্ট ভিডিও
আপলোড করতে পারেন। প্রতিটি প্লাটফর্মে প্রথম দিকে আপনি নিজের প্রোফাইলের
ফলোয়ার বাড়িয়ে নিবেন।
এরপর যখন দেখবেন বেশি ফলোয়ার হয়ে গেছে। তখন আপনি স্পন্সর পোস্ট ও
প্রোডাক্ট প্রমোশন পোস্ট করার মাধ্যমে ইনকাম করতে পারবেন।
৫. Quora বা Reddit এ পোস্ট করে ট্রাফিক নিয়ে ইনকাম
আপনি যদি অন্যের প্রশ্নের উত্তর দিতে পছন্দ করেন, তাহলে Quora বা
Reddit-এ কনটেন্ট পোস্ট করে নিজের ব্লগ বা অ্যাফিলিয়েট লিংকে ট্রাফিক
এনে ইনকাম করতে পারেন। এভাবে কিন্তু বিভিন্ন প্লাটফর্মে কন্টেন্ট পোস্ট
করে নিজের ব্লগে ট্রাফিক আনা যায়।
আপনারা জানেন ব্লগিং ওয়েবসাইটে ভিজিটর বেশি আসলে বেশি ইনকাম হয়।
এইজন্য এই পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনি নিজের ব্লগিং ওয়েবসাইটের ট্রাফিক
সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারেন। পাশাপাশি এফিলিয়েট মার্কেটিং করার
চেষ্টা করুন, কারণ এফিলিয়েট লিংকে ক্লিক হলেই ইনকাম হবে।
৬. Fiverr ও Freelancer প্রোফাইল পোস্ট করে ক্লায়েন্ট পাওয়া
আপনার যদি কোনো ডিজিটাল স্কিল (যেমনঃ ডিজাইন, রাইটিং, SEO, ভিডিও
এডিটিং) থাকে, তাহলে Fiverr, Freelancer বা Upwork-এ প্রোফাইল এবং গিগ
পোস্ট করে ক্লায়েন্ট পেতে পারেন। ক্লায়েন্ট পাওয়ার জন্য এই
উপায়টি বেশ কার্যকরী।
বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে নিজের একটি সুন্দর আকর্ষণীয়
প্রোফাইল খুলুন এবং গিগ পোস্ট পাবলিশ করতে থাকুন। কোন ক্লায়েন্ট আপনার
কাজ দেখে পছন্দ করলে আপনাকে কাজ দিতে পারে। এজন্য সঠিকভাবে
প্রোফাইল তৈরি করুন এবং আকর্ষণীয়ভাবে গিগ পাবলিশ করুন।
৭. অ্যাফিলিয়েট লিংক পোস্ট করে আয়
Amazon, Daraz, ClickBank, Digistore24 – এসব প্ল্যাটফর্মের অ্যাফিলিয়েট
লিংক আপনি ফেসবুক, ব্লগ, ইউটিউবের ডিসক্রিপশনে, এমনকি WhatsApp গ্রুপে
শেয়ার করেও ইনকাম করতে পারেন। আপনারা জানেন অ্যাফিলিয়েট লিঙ্কে ক্লিক
হলেই কমিশন থেকে ইনকাম হয়।
বিভিন্ন অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামে রেজিস্ট্রেশন করুন। আর বিভিন্ন
সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে আকর্ষণীয় পোস্ট করার মাধ্যমে লিংক যুক্ত
করুন। এভাবে মার্কেটিং করে পোস্ট করে টাকা আয় করা সম্ভব।
৮. মেম পেজ বা কনটেন্ট পেজ চালিয়ে ইনকাম
মজার পোস্ট, ট্রেন্ডি খবর বা ভাইরাল কনটেন্ট পোস্ট করে আপনি ফেসবুক বা
ইনস্টাগ্রামে একটি পেজ গড়ে তুলতে পারেন, আর সেই পেজে স্পনসরড পোস্ট বা
প্রোডাক্ট প্রমোশন করতে পারবেন। আর প্রমোশন থেকেই অনেক ইনকাম করা যায়।
বড় বড় কোম্পানির সাথে ডিল করুন এবং তাদের প্রোডাক্ট প্রমোশন
করুন।
লেখকের শেষ কথা
পোস্ট করে টাকা আয় করার অনেক কার্যকরী উপায় তুলে ধরেছি, আপনি যদি
ধৈর্য সহকারে উপায় গুলো অনুসরণ করে কাজ করেন তাহলে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই
পোস্ট করার মাধ্যমেই আপনি বিভিন্ন উপায়ে ইনকাম করতে পারবেন।
অনলাইনে ইনকাম করার জন্য প্রয়োজন ধৈর্য , পরিশ্রম এবং সঠিক প্ল্যাটফর্ম।
যদি সঠিক প্ল্যাটফর্ম বাছাই করতে পারেন তাহলে আপনার ইনকাম অনেক সহজ হয়ে
যাবে। আর সর্বশেষ বলবো ধৈর্য্য থাকলে আপনি নিয়মিত আয় করতে পারবেন।
শুরুতে হয়তো ইনকাম কম হবে, কিন্তু ধীরে ধীরে আপনি নিজেই একটি ব্র্যান্ড
হয়ে উঠবেন। আপনার কোন উপায়টি পছন্দ হয়েছে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে
পারেন।